জোড়া লাগলো কেটে আলাদা হয়ে যাওয়া হাত

Post Image

 

ছাপাখানায় কাজ করেন শঙ্কর সাহা। অন্যান্য দিনের মত সেদিনও ছাপাখানার যন্ত্রে কাগজ দিতে গেলেই হঠাৎ করে কাগজ কাটার ছুরি এসে পড়ে তার দু’হাতের কব্জির উপরে। হাতের দিকে তাকিয়ে দেখেন ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে। চোখের সামনে পড়ে রয়েছে কব্জির জোড় থেকে কাটা অংশ। তার এই কাটা হাতই জোড়া লাগিয়েছেন ভারতের এসএসকেএম হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ।

ভারতের বেলঘরিয়ার বাসিন্দা শঙ্কর সাহা। হাত জোড়া লাগবে, ভাবেননি তিনি। সেটাই সম্ভব করলেন চিকিৎসকরা। সরস্বতী প্রেসে দীর্ঘদিন কাজ করছেন শঙ্কর। গত মঙ্গলবার তিনি কলকাতা হাইকোর্টের গেজেট ছাপানোর কাজ করছিলেন। ভোর সাড়ে তিনটায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

হাসপাতালে শঙ্কর বলেন, ‘ওই সময়ে মনের অবস্থা কী ছিল, বোঝাতে পারব না। সামনে কাটা হাত দুটো পড়ে রয়েছে। রক্তে চারপাশ ভেসে যাচ্ছে। হাত জোড়া না লাগলে তো কিছু করার নেই, এই ভেবে মনকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলাম।’

শঙ্করের আর্তনাদ শুনে তড়িঘড়ি ছুটে আসেন ছাপাখানার অন্য কর্মীরা। হাতের অবস্থা দেখে প্রথমে তারাও ঘাবড়ে যান।

বিজন দাস নামে এক কর্মী জানান, শঙ্করকে প্রথমে কামারহাটি ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কাটা হাতটি প্লাস্টিকে মুড়ে নিয়ে গেলে যে জোড়া লাগানো যায়, তা বিভিন্ন সময়ে খবরের মাধ্যমে জেনেছিলেন তারা। তাই ওই যুবকের কাটা দুই হাত প্লাস্টিকে মুড়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

কামারহাটি ইএসআই থেকে আর জি কর হয়ে শঙ্করকে পাঠানো হয় এসএসকেএমে। সেখানে পৌঁছনো মাত্র তাকে ট্রমা কেয়ারে ভর্তি করানো হয়। দ্রুত চলে আসেন প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকেরা।

প্লাস্টিক সার্জন, অ্যানাস্থেটিস্ট মিলিয়ে ১৩ সদস্যের একটি চিকিৎসক দল তৈরি করা হয়।

এ দিন প্লাস্টিক সার্জারির বিভাগীয় প্রধান গৌতম গুহ জানান, রোগীর একটি হাত দুর্ঘটনায় কাটা পড়েছে বা আঙুল বাদ গিয়েছে, সেই অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু একসঙ্গে দু’টি হাত কেটে যাওয়ার বিষয়টি সচরাচর শোনা যায় না। এই ধরনের অস্ত্রোপচার অত্যন্ত জটিল। কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি জানান, দু’টি হাতের জন্য চিকিৎসকদের পৃথক দল গড়ে অস্ত্রোপচারের নেতৃত্ব দেওয়া সহজ নয়।

গৌতম গুহ বলেন, ‘কব্জির যে অংশে আঘাত লেগেছে সেখানে গুরুত্বপূর্ণ ধমনী, শিরা রয়েছে। ধমনীর সঙ্গে ধমনী, শিরার সঙ্গে শিরা জোড়ার পাশাপাশি স্নায়ু এবং হাতের জোড়ও নিখুঁত হওয়া প্রয়োজন।’

হাসপাতালে শুয়ে শঙ্কর বলেন, ‘আঙুলগুলো নাড়াতে পারছি। বেকার হয়ে গেলে মেয়েকে কী ভাবে মানুষ করব, ভেবে পাচ্ছিলাম না। এখন আর সেই চিন্তা নেই।’